অস্ত্র হাতে রুখে দাঁড়াচ্ছেন রোহিঙ্গারা।
কয়েক দশক ধরে চলা রোহিঙ্গা নির্যাতনের পর এবার মিলছে প্রতিরোধের আভাস। শুধু পালিয়ে বেড়ানো নয়, অস্ত্র হাতে রুখে দাঁড়াচ্ছেন রোহিঙ্গারা।
২৫ আগস্ট ভোরে মিয়ানমারের অন্তত ৩০টি পুলিশ ও সেনা ঘাঁটিতে হামলা পর থেকে রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয় নিপীড়ণ ও নির্যাতন। সীমানা পেরিয়ে আবারো দলে দলে বাংলাদেশে আসতে শুরু করেন রোহিঙ্গারা। তবে বরাবরের মতোই বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ফেরত পাঠাচ্ছে রোহিঙ্গাদের। তবে এবার শরণার্থীদের ঢলে একটু পরিবর্তন দেখছেন বিজিবি সদস্যরাও। অন্যান্যবার পুরো পরিবারসহ রোহিঙ্গারা পালিয়ে এলেও এবার শরণার্থীদের দলে পুরুষদের সংখ্যা একেবারেই কম বলে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন বিজিবি কর্মকর্তারা।
‘‘পুরুষদের কী হয়েছে, আমরা তাদের (রোহিঙ্গা নারীদের) জিজ্ঞেস করে জানা যায়, লড়াই করার জন্য পুরুষরা রয়ে গেছে।’’
আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি আর্মি (এআরএসএ)। অক্টোবর হামলার দায় স্বীকারের পর থেকেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে পরিচিত হয়ে উঠেছে এআরএসএ। দীর্ঘদিন ধরে জাতিগত নির্যাতনের শিকার হলেও সাধারণ রোহিঙ্গারা এতদিন সহিংসতা এড়িয়ে চলছিল। কিন্তু গত বছরের অক্টোবরে এবং চলমান সেনা অভিযানের পর সাধারণ রোহিঙ্গারাও হাতে তুলে নিচ্ছেন অস্ত্র।
সীমান্তে আসা রোহিঙ্গা নেতা শাহ আলম জানান, ‘আশেপাশের তিন গ্রাম থেকে অন্তত ৩০ জন যুবক ‘স্বাধীনতার যুদ্ধে’ যোগ দিয়েছে এআরএসএতে। তিনি প্রশ্ন করেন, ‘‘তাদের কীই বা করার ছিল! পশুর মতো খুন হওয়ার চেয়ে লড়াই করে মারা যাওয়ার পথ বেছে নিয়েছেন তাঁরা।”
আনুষ্ঠানিকভাবেই এখন বিশ্বজুড়ে এআরএসএকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে পরিচিত করানোর উদ্যোগ নিয়েছে মিয়ানমার সরকার। কঠোর বিবৃতি এবং এআরএসএর গুলিতে নিহত বেসামরিক নাগরিকদের ছবি প্রকাশ করে বিশ্বে জনমত গড়ে তোলারও চেষ্টা চালাচ্ছে মিয়ানমার। কিন্তু পালটা প্রচার চালাচ্ছে এআরএসএ-ও। শুধু মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যেই নয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের কাছেও পৌঁছে গেছে যুদ্ধের ডাক।
এআরএসএ বিদ্রোহীদের ভারী অস্ত্র বলতে কিছুই নেই। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে ছুরি, ঘরে তৈরি বোমা এবং আগ্নেয়াস্ত্র। ফলে মিয়ানমারের সুসজ্জিত সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধে কতটুকু টিকতে পারবে বিদ্রোহীরা, সে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।
কিন্তু তাতে দমছেন না রোহিঙ্গারা। ‘‘শত শত যোদ্ধা পাহাড়ে অবস্থান নিয়েছে। আরাকানকে রক্ষায় শপথ নিয়েছে রোহিঙ্গারা, সেটা চাকু এবং লাঠি দিয়ে হলেও তারা করবে।’’
কুতুপালং ক্যাম্পে এক রোহিঙ্গা যুবকের মন্তব্য ছিল এমন – ‘‘আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমাদের তরুণরাও চিন্তা করছেন যুদ্ধে যোগ দেয়ার। আমরা প্রতিজ্ঞা করেছি, প্রথম সুযোগেই আমরা সীমান্ত অতিক্রম করবো।”
তিন ছেলেকে নিয়ে গত মাসে সীমানা অতিক্রম করে বাংলাদেশে আসা হাজেরা বেগমে জানান, তার ২ ছেলে রয়ে গেছেন যুদ্ধ করবেন বলে। বাংলাদেশে আসার এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁর আরেক ছেলেও যোগ দেন লড়াইয়ে। কারণ, ওরা (মিয়ানমার সেনাবাহিনী) আমাদের এমনিতেই মারবে। এরা (এআরএসএ) আমাদের অধিকারের জন্য লড়াই করছে।আমি আমার ছেলেদের পাঠিয়েছি স্বাধীনতার জন্য লড়াই করতে।”


Hello, Welcome. It's a site of SS Connections 
No comments:
Post a Comment