লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা অবশেষে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে !!
টানা ৭ দিন সীমান্তের জিরো পয়েন্টে অবস্থানের পর অবশেষে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইএমও) তথ্য মতে আগত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৮ হাজার। আর ক্যাম্প সংশ্লিষ্টদের মতে এ সংখ্যা অর্ধলাখের কম নয়।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে থেমে থেমে চলা বৃষ্টিপাতের মধ্যে তারা বাংলাদেশে ঢুকতে পেরেছে বলে জানিয়েছে আগত রোহিঙ্গারা। নতুন করে আসা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকে পুরোনো রোহিঙ্গা বস্তি ও বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।
বালুখালী বস্তি এলাকায় স্বপরিবারে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের আরাকান (রাখাইন) রাজ্যের ঢেকিবনিয়া মিয়াপাড়ার দিল বাহার বেগম (৪১) জানান, স্বামী সেদেশের সেনাবাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর তিন সন্তান নিয়ে অন্যদের সঙ্গে ২৭ আগস্ট সীমান্ত এলাকায় এসেছিলাম। কিন্তু তিনদিন ধরে জিরো পয়েন্টে অন্যদের সঙ্গে অবরুদ্ধ ছিলাম। পানি-খাবার সব কিছুর সংকটে শিশুদের কান্নায় অস্থির হয়ে উঠি। কী করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর আল্লাহ রহমত হিসেবে বৃষ্টি পাঠালেন। জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেয়ারা বৃষ্টিতে ভিজে বিপর্যস্ত হয়। এরপর সব কিছু গুছিয়ে সবাই বাংলাদেশে ঢুকে পড়ি। আমরা ওখানে কয়েক হাজার ছিলাম। বাংলাদেশে ঢুকে যে যেখানে পেরেছে আশ্রয় নিয়েছি।
এদিকে সংবাদ সম্মেলন করে গত এক সপ্তাহে ১৮ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)।
বুধবার দুপুরে আইওএম কক্সবাজার কার্যালয়ে অফিস প্রধান সংযুক্তা সাহানী এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
এদিকে, বুধবার সীমান্তের রেজু আমতলী গিয়ে দেখা যায়-শত শত রোহিঙ্গারা জড়ো হয়ে টমটম গাড়ী যোগে উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী রোহিঙ্গা বস্তিতে আশ্রয় নিচ্ছে। তাদের সাথে নিয় আসা গরু, ছাগল, মুরগি স্থানীয় কতিপয় সুবিধাভোগী নামমাত্র মূল্যে কিনে নিচ্ছে।
আমতলী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা মংডুর সাহেব বাজার নারাইন সং গ্রামের মৃত নুর আহম্মদের ছেলে ৭৫ বছর বয়সী রোহিঙ্গা আবদুল গফুর বলেন, গত পাচঁ দিন ধরে পাহাড়ের গহীন জঙ্গলে না খেয়ে অবস্থান করেছি। বৃষ্টি ও ক্ষুধার কারণে আর লুকিয়ে থাকা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই বুধবার সকালে ওয়ালিদং পাহাড় পার হয়ে কোনো রকম এখানে এসেছি।
উখিয়ার বালুখালী বস্তির লালু মাঝি জানান, বুধবার পর্যন্ত তার ক্যাম্পে ১ হাজার ৩৮৫ পরিবার নতুন করে আশ্রয় নিয়েছে। যাদের অধিকাংশই পুরুষহীন পরিবার।
বিজিবি কক্সবাজার সেক্টর কমান্ডার (ভারপ্রাপ্ত) লে. কর্নেল আনোয়ারুল আজিম বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে পাহাড়ি এলাকায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ফলে শুধুমাত্র নির্ধারিত পয়েন্ট ছাড়া বাকি স্থলে টহল পাহারা নিয়মিত করা সম্ভভ হয়নি। একারণে সব দিক দিয়ে বিপর্যস্ত কিছু রোহিঙ্গা হয়তো অনুপ্রবেশ করতে পারে। ওপারে এখনো গোলাগুলি ও বোমার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। তাই জিরোপয়েন্ট অবস্থানকারিদের প্রতি আমরা কঠোরতা দেখাচ্ছি না। তবে, আগের মতোই আমরা তাদের প্রতিহত করছি। ৩৪ বিজিবি ও ২ বিজিবি এবং নাইক্ষংছড়ি বিজিবি সতর্ক পাহারা অব্যহত রেখেছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগস্ট ভোররাত থেকে রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে রোহিঙ্গা অধিকার রক্ষা বিষয়ক সশস্ত্র স্বাধীনতাকামী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্যদের সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষকে ঘিরে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী রাখাইন জুড়ে অভিযান শুরু করলে গত ছয় দিনে প্রায় ১১০ জন নিহত হয়। এছাড়া প্রাণ বাঁচাতে অন্তত সাড়ে ১৮ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় বলে আন্তর্জাতিক অভিবাসন পর্যবেক্ষণ সংস্থা।


Hello, Welcome. It's a site of SS Connections 
No comments:
Post a Comment